সংস্কারের প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা
- By Jamini Roy --
- 28 December, 2024
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি সংস্কার কার্যক্রমকে সামনে রেখে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "ঐকমত্য গড়তে হলে আমাদের নিজ নিজ অবস্থানে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।"
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ ২০২৪-এর প্রথম অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন। সংলাপটি আয়োজন করে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, "ঐক্যের জন্য আমাদের বুঝতে হবে কোন কোন বিষয়ে ঐক্য দরকার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, রাজনৈতিক সংস্কার, এবং তরুণ প্রজন্মকে রাষ্ট্র পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ঐক্যের প্রয়োজন। জনগণকে সম্পৃক্ত করেই এই ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "সংস্কারের প্রশ্নে একমত হলে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে—সংস্কার কীভাবে, কত দিনে, এবং কার মাধ্যমে কার্যকর করা হবে। এ বিষয়ে পিছপা হওয়া চলবে না।"
পরিবেশ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, "জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হবে। আমাদের রাজনৈতিক অস্বস্তি ও জটিলতা কাটাতে সংস্কার অপরিহার্য। তবে সংস্কার শুধু কাগজে-কলমে হলে হবে না, এর বাস্তবায়ন ও চর্চা করতে হবে।"
তিনি বলেন, "নেতৃত্ব পরিবর্তন করলেই সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে—এমন ধারণা ভুল। দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। ক্ষমতা প্রয়োগে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।"
রিজওয়ানা হাসান বলেন, "ঐক্যের পথ সহজ নয়। ঐতিহ্যগত রাজনীতি বদলানোর এই যাত্রা খুবই বন্ধুর। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। প্রচলিত সমস্যাগুলো রাতারাতি সমাধান হবে না।"
তিনি আরও বলেন, "তরুণ নেতৃত্ব বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রধান চালিকা শক্তি হতে পারে। তারা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাগুলো দেখতে এবং সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারে। তবে, অভিজ্ঞতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা আইনের পাশাপাশি মনোজগতেও পরিবর্তন আনার দাবি রাখে।"
সংলাপে তিনি জানান, "সরকার সংস্কারের প্রশ্নে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, একটি ঐকমত্য কমিশন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই কমিশনের মাধ্যমে আমরা জনগণের প্রত্যাশা এবং তার বাস্তবায়নের রূপরেখা ঠিক করতে পারব।"
পরিবেশ উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে সংস্কার কার্যক্রম সফল হলে তা বিদ্যমান রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ তরুণ নেতাদের জন্যও সুফল বয়ে আনবে। তিনি বলেন, "ঐক্যের পথ আঁকাবাঁকা এবং কঠিন হলেও আমাদের জনগণের আশার প্রতিফলন ঘটাতে বদ্ধপরিকর হতে হবে।"
তিনি তরুণদের ভূমিকাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, "তরুণ নেতৃত্ব নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্যম নিয়ে সংস্কারের পথ সুগম করতে পারে। তবে, অভিজ্ঞদের সহায়তায় এই প্রক্রিয়া চালিয়ে নিতে হবে।"
পরিবেশ উপদেষ্টা তার বক্তব্যে সংস্কার কার্যক্রমে ধৈর্য, ঐক্য, এবং জনগণের অংশগ্রহণের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, "আমরা যদি সবাই মিলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি, তাহলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব হবে।"